উৎপত্তি ও অবস্থান
কর্ণফুলি নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি মিজোরামের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, কাপ্তাই, এবং চট্টগ্রাম হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। এটি বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের প্রধান নদী।
প্রবাহপথ
নদীটি রাঙামাটি জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি করেছে। এরপর এটি চট্টগ্রাম শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়ে কর্ণফুলী বন্দর এলাকায় বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। এটি চট্টগ্রাম শহরের জীবনরেখা বলা হয়।
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ
কর্ণফুলী নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬১ কিলোমিটার। এর প্রস্থ ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন হলেও শহরের অংশে গড়ে ৪০০-৬০০ মিটার পর্যন্ত হয়।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প
বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র — কাপ্তাই হ্রদ কর্ণফুলি নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে। ১৯৬২ সালে এটি চালু হয় এবং দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও জলাধার ও পানির উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
চট্টগ্রাম বন্দর এই নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় কর্ণফুলি নদী দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন শত শত বাণিজ্যিক জাহাজ এই নদীপথ ব্যবহার করে।
দূষণ সমস্যা
চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য এবং বন্দর এলাকার নৌচলাচলের কারণে কর্ণফুলি নদী বর্তমানে মারাত্মক দূষণের শিকার। মাছ ও জলজ জীবের বসবাসের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে।
সামাজিক ও ঐতিহাসিক দিক
এই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ব্যবসা, সংস্কৃতি ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা। কর্ণফুলী নামটি এসেছে সংস্কৃত “করনফুলা” শব্দ থেকে, যার অর্থ “কর্ণে পরিধেয় ফুল।”